সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। এরই মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে, বিশেষ এলাকা ছাড়া সেগুলোকেও আর নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হবে না। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিগগিরই আদেশ জারি করবে সরকার। গতকাল রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্ন মাধ্যমিকের পরবর্তী স্তরের অনুমোদন, নতুন কলেজ বা একাদশ শ্রেণি খোলা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গতকাল নীতিনির্ধারণী সভা হয়। সভায় দেশে নতুন করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার চেয়ে নিয়োগ বাণিজ্য এবং শিক্ষা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যেই সেগুলো গড়ে উঠছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, দেশের বেশির ভাগ এলাকায়, বিশেষ করে রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গ, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা এলাকায় প্রয়োজন বা প্রাপ্যতার চেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এবার উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির পরও প্রায় সাত লাখ আসন খালি আছে। তাই প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের ব্যাপারে সতর্কতা ও কঠোরতা অবলম্বন এবং একই সঙ্গে সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের হাই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে পূর্ব অনুমোদন ছাড়া নবম-দশম শ্রেণি পর্যায়ের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যায়ে কলেজ এবং নবম শ্রেণির পর্যায়ের দাখিল ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যায়ের আলিম মাদ্রাসা স্থাপিত হলে এর অনুমোদন দেওয়া হবে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে পূর্বানুমতি নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষা আইনে সম্পৃক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সভায় যেসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে এবং অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, সেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানকে পাঠদানের অনুমতি না দিতে বোর্ডগুলোকে নির্দেশনা পাঠানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে পাহাড়ি এলাকা, হাওর, চর ও দুর্গম এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যাপারে কেউ আগ্রহ দেখালে এবং সরকারের কাছে আবেদন করলে অনুমতি দেওয়া হবে। এ রকম দুর্গম এলাকায় ইতিমধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়ে থাকলে সেগুলোরও অনুমোদন দেওয়া হবে।
এর আগে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা উন্নীত হওয়ার পর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে গতকালের সভায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সভা হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া আর কোনো স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপন না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে নির্দেশনাসংবলিত সার্কুলার শিগগিরই জারি করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানান, বর্তমানের প্রচলিত রীতি অনুসারে ব্যক্তিপর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। দুই-তিন বছর চালানোর পর শিক্ষা বোর্ড পাঠদানের অনুমোদন দিয়ে তালিকাভুক্ত করে। পর্যায়ক্রমে সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসে। এই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সারা দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সে সুযোগ আর থাকবে না। কোথাও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাইলে আগেই অনুমোদন নিতে হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ৩৮ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার প্রতিষ্ঠান সরকারি এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) সুবিধা ভোগ করে।
পাঠকের মতামত